আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা'আলা মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য প্রত্যেক যুগেই নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। আর এইসব নবী-রাসূলগণ যে মহান আল্লাহর তরফ থেকে প্রেরিত সত্য নবী ও রাসূল, তার কিছু নিদর্শন স্বরূপ মহান আল্লাহ নবীদের মাধ্যমে কিছু অলৌকিক কার্যাবলি মানুষের সম্মুখে প্রদর্শন করান—যেন তারা নবীদের নবুয়তের সততার প্রমাণ জানতে ও বুঝতে পারে এবং একক ও অদ্বিতীয় সত্ত্বা মহান আল্লাহর উপর ইমান আনতে পারে। কিন্তু নবীদের এই অলৌকিক কার্যাবলির কারণে কেউই আল্লাহ হয়ে যান না। এরপরও ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানরা ঈসা আঃ এর কিছু অলৌকিক কার্যাবলির সম্পর্কে অবগত হয়ে তাঁকে ভুলবশত আল্লাহ্ বা ঈশ্বর বলে দাবি করে (নাঊযুবিল্লাহ)।
খ্রিস্টান ধর্ম-প্রচারকরা যীশুর খোদাত্বের প্রমাণ হিসেবে দাবি করে যে, যীশু নানাপ্রকার অলৌকিক কীর্তিকলাপ/কাজ করেছেন—যা খোদা ব্যতীত অন্য কারো দ্বারা সম্ভব নয়। যেমন: মৃতকে জীবিত করা, কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য করা, অন্ধকে ভালো করে দেওয়া ইত্যাদি। এর স্বপক্ষে তারা পবিত্র আল-কোরআনের ৩:৪৯ নং আয়াত, অর্থাৎ সূরা আলে ইমরান (آل عمران), আয়াত: ৪৯ উদ্ধৃত করে:
وَرَسُولًا إِلَىٰ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ أَنِّى قَدْ جِئْتُكُم بِـَٔايَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ أَنِّىٓ أَخْلُقُ لَكُم مِّنَ ٱلطِّينِ كَهَيْـَٔةِ ٱلطَّيْرِ فَأَنفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًۢا بِإِذْنِ ٱللَّهِ وَأُبْرِئُ ٱلْأَكْمَهَ وَٱلْأَبْرَصَ وَأُحْىِ ٱلْمَوْتَىٰ بِإِذْنِ ٱللَّهِ وَأُنَبِّئُكُم بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِى بُيُوتِكُمْ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَءَايَةً لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
অর্থঃ "আর বনী ইসরাঈলদের জন্যে রাসূল হিসেবে তাঁকে (ঈসা/যীশু) মনোনীত করবেন। তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে এসেছি নিদর্শনসমূহ নিয়ে। আমি তোমাদের জন্য মাটির দ্বারা পাখির আকৃতি তৈরি করে দিই। তারপর তাতে যখন ফুৎকার প্রদান করি, তখন তা উড়ন্ত পাখীতে পরিণত হয়ে যায় আল্লাহর হুকুমে। আর আমি সুস্থ করে তুলি জন্মান্ধকে এবং শ্বেত কুষ্ঠ রোগীকে। আর আমি জীবিত করে দেই মৃতকে আল্লাহর হুকুমে। আর আমি তোমাদেরকে বলে দেই যা তোমরা খেয়ে আস এবং যা তোমরা ঘরে রেখে আস। এতে প্রকৃষ্ট নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।’"
খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকরা যীশুর খোদাত্বের প্রমাণ হিসেবে এই আয়াতকে দাবি করে বলে যে, কোরআনেও যীশুর খোদাত্বকে স্বীকার করা হয়েছে (নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক)। এবং কোরআনের কোন কোন তাফসীরকারকও “যীশু তথা ঈসা আঃ কর্তৃক মৃত্তিকা দ্বারা পাখির আকৃতি গঠনপূর্বক ফুৎকার প্রদান করে তাকে জীবিত পাখিতে পরিণত করা, মৃতকে জীবিত করা, জন্মান্ধকে দৃষ্টিশক্তি দেওয়া এবং কুষ্ঠরোগীকে হাতের স্পর্শমাত্র আরোগ্য করা… এতদ্ভিন্ন সমবেত লোকদের খাদ্য-পানীয় এবং সংগৃহীত দ্রব্যাদি সম্পর্কেও নানা রূপ বিস্ময়কর সংবাদ” দেওয়ার সম্বন্ধে বিশ্বাস ও সংস্কারের পূর্ণ সমর্থন করেছেন।
[বিঃদ্রঃ] কোরআনে দুই ধরনের আয়াত রয়েছে—একটা "স্পষ্ট", আরেকটা "অস্পষ্ট" আয়াত। তবে "অস্পষ্ট" আয়াত সংখ্যা "স্পষ্ট" আয়াতের তুলনায় অনেক কম। আর কোরআনের অনেক কথাই বিভিন্ন উপমার মাধ্যমে বলা হয়েছে যা সরাসরি অর্থে গ্রহণ করলে আয়াতের প্রকৃত তাৎপর্য/মাহাত্ম্য বুঝা যাবে না। ঠিক বাইবেলেও এমন অসংখ্য উপমার মাধ্যমে যীশু তথা ঈসা আঃ এর কথা বর্ণিত হয়েছে যা সরাসরি অর্থে গ্রহণ করলে ভ্রান্ত হওয়া ছাড়া কোন রাস্তা নেই।
আর বাইবেলে হযরত ঈসা আঃ কর্তৃক জন্মান্ধকে দৃষ্টিশক্তি দান, কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য দান এবং মৃতকে জীবিত করার প্রথা লিপিবদ্ধ রয়েছে। কিন্তু মৃন্ময় পক্ষীকে সজীব করার প্রথা উল্লেখ করা হয়নি। ইহুদিরা ঐসব কথায় সম্পূর্ণ অবিশ্বাসী। খ্রিস্টানরাও বাইবেলে যা লিখিত আছে, তদ্ব্যতীত অন্য কথায় অবিশ্বাসী।
আধুনিক কোন কোন তাফসীরকারক হযরত ঈসা আঃ এর অলৌকিক নিদর্শন সম্বন্ধে পবিত্র কোরআন ও বাইবেলে যেসব উক্তি রয়েছে, তার সবগুলোকেই রূপক বর্ণনা বলে অভিহিত করেছেন।
তারা বলেন—"আল্লাহ ব্যতীত অপরের পক্ষে মৃতকে জীবিত করা, কোন নতুন জীব সৃষ্টি করা, কিংবা প্রাকৃতিক শক্তিকে স্বীয় আজ্ঞাধীন করা সম্পূর্ণ অসম্ভব।"
যদিও আহসানুল বায়ান (কোরআনের সংক্ষিপ্ত তাফসীর), তাফসীরে ইবনে কাসির, তাফসীরে আবু বকর যাকারিয়া, তাফসীরে ফাতহুল কাদীর, এবং তাফসীরে জালালাইন-এ বলা হয়েছে যে যীশু তথা ঈসা আঃ নিজ থেকে কিছুই করতে পারতেন না—তিনি শুধুই আল্লাহর হুকুমে মৃতকে জীবিত করতেন, জন্মান্ধকে দৃষ্টিশক্তি দান করতেন এবং কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য করতেন। কিন্তু এসব তাফসীরে সম্ভবত রূপক বলে বর্ণনা করা হয়নি।
যাই হোক, আধুনিক অনেক তাফসীরকারক/স্কলাররা বলেছেন— তাদের মতে
"মৃন্ময় পক্ষী মূর্তিকে সজীব করার" অর্থ বলতে বোঝানো হয়েছে: তুচ্ছ মাটির মানুষকে আধ্যাত্মিক জীবন্ত শক্তি প্রদান করা।
"মৃতকে জীবিত করার" অর্থ বলতে বোঝানো হয়েছে: অবনত ও পতিত জাতিকে উন্নত ও শক্তিশালী করা।
আর "অন্ধকে দৃষ্টিশক্তি, খঞ্জকে চলৎশক্তি, রোগীকে আরোগ্য ও বধিরকে শ্রবণশক্তি দান" (নতুন নিয়ম) প্রভৃতির অর্থ বলতে বোঝানো হয়েছে: ধর্মহীনকে ধর্ম শিক্ষা দান, পথভ্রষ্টকে পথপ্রদর্শন, অজ্ঞানান্ধকে জ্ঞানের আলো দান এবং নির্বোধ মূর্খদেরকে ধর্মজ্ঞান ও উপদেশ প্রদান প্রভৃতি।
সোর্স: [তঃ কবির, বয়জবী ও বাঃ কোঃ- মঃ আঃ প্রভৃতি তুলিতব্য] (তরজমা ও তাফসীর, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৭১–৭২, ওসমানিয়া লাইব্রেরি-কলকাতা)
পবিত্র কোরআনে (৩:৪৯) আয়াতে যীশু তথা ঈসা আঃ বনি ইসরাঈলের নিকট রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়ে বলেছিলেন—
"وَرَسُولًا إِلَىٰ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ۬ۙ أَنِّى قَدْ جِئْتُكُم بِآيَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ ۙ أَنِّىٓ أَخْلُقُ لَكُم مِّنَ ٱلطِّينِ كَهَيْـَٔةِ ٱلطَّيْرِ فَأَنفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًۭا بِإِذْنِ ٱللَّهِ ۚ وَأُبْرِئُ ٱلْأَكْمَهَ وَٱلْأَبْرَصَ وَأُحْـۧىِ ٱلْمَوْتَىٰ بِإِذْنِ ٱللَّهِ ۚ وَأُنَبِّئُكُم بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِى بُيُوتِكُمْ ۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَـَٔايَةًۭ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ"
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি (ঈসা) তোমাদের রবের নিকট হতে নিদর্শনসহ তোমাদের নিকট আগমন করেছি; নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য মাটি হতে পাখির আকার গঠন করব, অতঃপর ওর মধ্যে ফুৎকার দিব, অনন্তর আল্লাহর আদেশে ওটা পাখি হয়ে যাবে; এবং জন্মান্ধকে ও কুষ্ঠ রোগীকে নিরাময় করি এবং আল্লাহর আদেশে মৃতকে জীবিত করি এবং তোমরা যা আহার কর ও তোমরা যা স্বীয় গৃহে সংগ্রহ করে রাখ, তদ্বিষয়ে সংবাদ দিচ্ছি— যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তাহলে নিশ্চয়ই এতে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।”
এখানে আয়াতের বিভিন্ন অর্থবাচক শব্দগুলোকে সাধারণ অর্থে গ্রহণ করলে স্বীকৃত হয় যে যীশুর মৃতকে জীবিত করার, জন্মান্ধকে দৃষ্টিশক্তি দান করার শক্তি পর্যন্ত ছিল এবং এই শক্তি তাঁর থাকলে নিশ্চয়ই তিনি তা প্রয়োগও করতেন। যাই হোক, এখানে পরিষ্কারভাবে এটাও বোঝা যাচ্ছে যে, যীশু নিজ থেকে নয় বরং আল্লাহর সাহায্যে উক্ত কাজগুলো করতেন। আর আল্লাহর সাহায্য যদি না থাকত, তাহলে তিনি উক্ত কাজগুলো করতে জানতেন না।
📌 [নোট:]
যাই হোক, যীশু তথা ঈসা আঃ কি সত্যিই মানুষকে জীবিত করতে পারতেন কিনা, নাকি কথাগুলো রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই ভালো জানেন।
এবার প্রসঙ্গ ধরে আলোচনায় আসি:
যদি সাধারণ অর্থে এটা নিই যে, যীশু তথা ঈসা আঃ আল্লাহর সাহায্যে মানুষকে জীবিত করতে পারতেন—তাহলে এটা কোরআনের নৈতিক শিক্ষার বিরুদ্ধে। এমন তাৎপর্য গ্রহণ করা মোটেই সঙ্গত হবে বলে মনে হয় না।
কেননা, পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—
সূরা আল ফুরকান (الفرقان), আয়াত: ৩
وَٱتَّخَذُوا۟ مِن دُونِهِۦٓ ءَالِهَةًۭ لَّا يَخْلُقُونَ شَىْـًۭٔا وَهُمْ يُخْلَقُونَ وَلَا يَمْلِكُونَ لِأَنفُسِهِمْ ضَرًّۭا وَلَا نَفْعًۭا وَلَا يَمْلِكُونَ مَوْتًۭا وَلَا حَيَوٰةًۭ وَلَا نُشُورًۭا
অর্থঃ "তারা তাঁর পরিবর্তে কত উপাস্য গ্রহণ করেছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করে না এবং তারা নিজেরাই সৃষ্ট; নিজেদের ভালও করতে পারে না, মন্দও করতে পারে না এবং জীবন, মরণ ও পুনরুজ্জীবনেরও তারা মালিক নয়।"
[নোট: অনেক মুশরিক, কাফিররা মানুষ {নমরুদ, ফেরাউন} থেকে শুরু করে চাঁদ, সূর্য এবং প্রকৃতির বিভিন্ন বস্তুকে স্রষ্টা হিসেবে গ্রহণ করেছিল—এবং এখনো করে। এমনকি যীশুর মাতা মরিয়মকে পর্যন্ত উপাসনা করত।]
আবার পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে—
সূরা আল হাজ্জ্ব (الحجّ), আয়াত: ৭৩
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌۭ فَٱسْتَمِعُوا۟ لَهُۥٓ ۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ لَن يَخْلُقُوا۟ ذُبَابًۭا وَلَوِ ٱجْتَمَعُوا۟ لَهُۥ ۖ وَإِن يَسْلُبْهُمُ ٱلذُّبَابُ شَيْـًۭٔا لَّا يَسْتَنقِذُوهُ مِنْهُ ۚ ضَعُفَ ٱلطَّالِبُ وَٱلْمَطْلُوبُ
অর্থঃ "হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন; তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা কর, তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও তারা সকলে একত্রিত হয়। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু ছিনিয়ে নেয়, তবে তারা তা উদ্ধার করতে পারবে না। প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয়—উভয়েই দুর্বল।"
উপরোক্ত আয়াতদ্বয় থেকে বোঝা যায়—
i) সৃষ্টির অধিকার/ক্ষমতা তাদের নেই।
ii) কারো মৃত্যু ঘটানোর ক্ষমতা তাদের নেই।
iii) কাউকে জীবন দানের ক্ষমতাও তাদের নেই।
iv) কোনো মৃতকে জীবিত করার ক্ষমতাও তাদের নেই।
সুতরাং, যাদেরকে আল্লাহর অংশীদার হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে—তাদের মধ্যে অন্যতম খ্রিস্টধর্মের যীশু, তিনিও এই গুণচতুষ্টয়ের অধিকারী ছিলেন না।
আরও উল্লেখ্য, পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদীস থেকে জানা যায়, মানুষ একবার মরে যাওয়ার পর কিয়ামত পর্যন্ত তার পুনর্জীবিত হওয়া সম্ভব নয়।
যেমন, পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন—
সূরা আল আম্বিয়া (الأنبياء), আয়াত: ৯৫
وَحَرَٰمٌ عَلَىٰ قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَٰهَآ أَنَّهُمْ لَا يَرْجِعُونَ
অর্থঃ "যেসব জনপদকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, তার সম্পর্কে হারাম (অলঙ্ঘনীয় বিধান) করা হয়েছে যে, তার অধিবাসীরা পুনরায় কখনো ফিরে আসবে না।"
হাদীসেও এসেছে— আল্লাহ তা‘আলা শহীদদের প্রার্থনা করতে বললে তারা বলবে, "আমাদের কোন অভাব নেই।"
শেষ পর্যন্ত তারা বলবে:
"হে প্রভু! আমাদের একটাই আকাঙ্ক্ষা—আপনি আমাদের আবার দুনিয়ায় পাঠান, আবার আমরা আপনার নামে জিহাদ করি এবং শহীদ হই।"
তখন আল্লাহ বলেন:
"আমার অলঙ্ঘনীয় সিদ্ধান্ত—একবার যারা মারা গেছে, তারা আর ফিরে আসবে না।"
(সহীহ মুসলিম, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ প্রভৃতি)
📌 প্রকৃতপক্ষে যীশুর মূল শিক্ষা থেকে খ্রিস্টানরা কতদূর স্থলিত হয়েছে, তা নাজরান ডেপুটেশনকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যই যীশুর নিজ মুখের উক্তি (কুরআন ৩:৫০ আয়াতে) তাঁরই ভাষায় উদ্ধৃত হয়েছে।
এর মধ্যে যে গূঢ় তথ্য নিহিত আছে, তা জানতে যীশুর জীবনচরিতের আশ্রয় নিতে হবে। তাঁর জীবন-ইতিহাস রচয়িতারা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন যে, যে কোনো কারণেই হোক, যীশু জনসাধারণের জন্য তাঁর ধর্মমত প্রচার করতেন রূপকভাবে (Allegorical), উপমা-উদাহরণের মাধ্যমে।
যেমন: ইঞ্জিল লেখক মথি বলেছেন— “তখন তিনি উপমার দ্বারা তাদের নিকট অনেক কথাই বললেন” (১৩:৩)।
পরে শিষ্যরা এসে তাঁর কাছে বললেন, “আপনি কী কারণে উপমা দ্বারা এদের নিকট কথা বললেন?”
তিনি উত্তরে তাদের বললেন, “স্বর্গরাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্বগুলো তোমাদের জানতে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাদের দেওয়া হয়নি। কারণ, যার আছে তাকে আরও দেওয়া হবে, আর তার উপচে পড়বে; কিন্তু যার নেই, তার যা আছে তাও তার কাছ থেকে নেওয়া হবে। এজন্য আমি উপমা দ্বারা তাদের নিকট কথা বলি। কারণ তারা দেখেও দেখে না, আর শুনেও শুনে না, এবং বুঝেও বুঝে না।” (মথি ১৩:১০–১৩)
মার্ক বলেছেন—
“তিনি উপমা দ্বারা তাদের অনেক বিষয় শিক্ষা দিলেন” (৪:৩)।
পরে যখন তিনি একাকী ছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গীরা সেই ১২ জন শিষ্যকে নিয়ে তাঁকে উপমার বিষয়টি জিজ্ঞেস করলেন।
তিনি তাদের বললেন, “খোদার রাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্বগুলো তোমাদের জানতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যারা বাইরে রয়েছে, তাদের জন্য সমস্ত কিছুই উপমা দিয়ে বলা হয়— যেন তারা, যদিও দেখে, তবুও প্রত্যক্ষ করে না;
যদিও শুনে, তথাপি না বুঝে— পাছে তারা ফিরে আসে ও তাদের ক্ষমা করা হয়।”
পরে তিনি তাদের বললেন, “তোমরা এই উপমাটি যখন বুঝতে পারলে না, তখন অন্যগুলোর অর্থ কীভাবে বুঝবে?” (মার্ক ৪:১০–১৩)
উল্লিখিত বর্ণনা থেকে জানা যাচ্ছে যে, যীশু জনসাধারণের মধ্যে রূপক ভাষায় উপমা-উদাহরণের মাধ্যমে ধর্ম প্রচার করতেন, যার মর্ম তারা কিছুই বুঝতে পারত না। এমনকি তাঁর অন্তরঙ্গ শিষ্য-সহচরদের পর্যন্ত অনেক সময় সেসবের অর্থ বা মর্ম গ্রহণ করা ছিল অসম্ভব। এজন্য তিনি বাড়ি গিয়ে তাঁর শিষ্যদের তা বুঝিয়ে দিতেন।
অতএব যীশু কী বলেছেন বা বলেননি, তাঁর প্রকৃত মর্ম তৎকালীন জনসাধারণ, এমনকি শিষ্য-সহচররাও বুঝতে পারতেন না— আর বর্তমান খ্রিস্টানদের তো বুঝার প্রশ্নই ওঠে না।
অধিকন্তু যীশুর কাছে জিজ্ঞেস করার কোনো সুযোগ-সুবিধা যখন নেই, তখন ৩:৫০ আয়াতের অবোধ্য উক্তি নিয়ে যীশু খ্রিস্টের অতিমানুষী বা খোদাত্বের/খোদায়ী স্বরূপের ভিত্তি খোঁজা খ্রিস্টান প্রচারকদের সঙ্গত নয় তথা অযৌক্তিক।