Are you sure?

বিবিধ »  ইসলাম বিদ্বেষীদের অপনোদন

ইসলাম কেন বহুবিবাহের কথা বলে?

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এবং আল্লাহর রাসূলের উপর শান্তি ও দুরূদ বর্ষিত হোক।

ইসলামে বহুবিবাহের হুকুম

কুরআনে বহুবিবাহের অনুমতি সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।

আল্লাহ বলেছেন:“আর যদি তোমরা আশঙ্কা করো যে ইয়াতীম কন্যাদের সঙ্গে বিবাহ করলে ন্যায়বিচার করতে পারবে না, তবে তোমাদের পছন্দমতো নারীদের সঙ্গে বিবাহ করো—দুই, তিন বা চার পর্যন্ত। তবে যদি আশঙ্কা করো যে (তাদের মধ্যে) ন্যায়বিচার করতে পারবে না, তবে একজনই যথেষ্ট, অথবা দাসীদের মধ্যে যাদের-কে তোমাদের ডান হাত অধিকার করে। এর মাধ্যমে অন্যায় করা হতে সর্বোচ্চ বিরত থাকা সম্ভব।” [আন-নিসা ৪:৩]

এ আয়াত স্পষ্টভাবে বলে যে একজন মুসলিম পুরুষ সর্বোচ্চ চারজন স্ত্রী রাখতে পারে, তার বেশি নয়। এ বিষয়ে আলেমদের ঐকমত্য রয়েছে।

ইসলামে বহুবিবাহের শর্তাবলি

১. ন্যায়বিচার করা
আল্লাহ বলেছেন:
“কিন্তু যদি আশঙ্কা করো যে তোমরা ন্যায়বিচার করতে পারবে না, তবে একজনই যথেষ্ট।” [আন-নিসা ৪:৩]

অতএব, একাধিক স্ত্রী গ্রহণের অনুমতির জন্য ন্যায়বিচার করা শর্ত। ভরণপোষণ, পোশাক, রাত যাপন ও বসবাসের ক্ষেত্রে সমান আচরণ করতে হবে। তবে হৃদয়ের ভালোবাসার ক্ষেত্রে সমান আচরণ করা মানুষের ক্ষমতার বাইরে, এজন্যই আল্লাহ বলেছেন: “তোমরা স্ত্রীদের মধ্যে কখনোই পূর্ণ ন্যায়বিচার করতে সক্ষম হবে না, যদিও তা খুবই কামনা কর।” [আন-নিসা ৪:১২৯]

২. ভরণপোষণের সামর্থ্য থাকা
আল্লাহ বলেছেন: “আর যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে, যতক্ষণ না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করেন।” [আন-নূর ২৪:৩৩]

আল্লাহ এই আয়াতে নির্দেশ দিয়েছেন, যাদের বিয়ের ইচ্ছা ও শারীরিক সামর্থ্য আছে, কিন্তু আর্থিক কারণে বিয়ে করতে পারছে না—তাদেরকে সংযমী থাকতে হবে এবং হারাম পথে যাওয়া যাবে না।

এখানে আর্থিক অক্ষমতার একটি উদাহরণ হলো—

  • স্ত্রীর জন্য নির্ধারিত মহর (দেনমোহর) দেওয়ার মতো অর্থ না থাকা, অথবা
  • বিবাহের পর স্ত্রীর ভরণপোষণ ও খরচ বহন করার সামর্থ্য না থাকা।

এমন পরিস্থিতিতে একজন মুসলিম যুবককে ধৈর্য ধরতে হবে, আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে, যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ থেকে আর্থিক সামর্থ্য দান করেন। অতএব, আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে বিয়ে করা জায়েজ নয়। (আল-মুফাসসাল ফি আহকাম আল-মারআহ, খণ্ড ৬, পৃ. ২৮৬)

 
ইসলামে বহুবিবাহ বৈধ হওয়ার কারণ

উম্মতের সংখ্যা বৃদ্ধি
বহুবিবাহ মুসলিম উম্মাহর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। সংখ্যা বৃদ্ধি কেবল বিয়ের মাধ্যমেই সম্ভব, আর বহুবিবাহ করলে সন্তানের সংখ্যা এক স্ত্রীর মাধ্যমে জন্মদানের চেয়ে অনেক বেশি হয়।
বুদ্ধিমানরা জানেন, বেশি জনসংখ্যা উম্মাহকে শক্তিশালী করে, কর্মীর সংখ্যা বাড়ায় এবং রাষ্ট্র সঠিকভাবে পরিচালিত হলে অর্থনৈতিক মানও উন্নত হয়।
যারা বলে যে মানুষ বেশি হলে পৃথিবীর সম্পদ শেষ হয়ে যাবে—তাদের কথা ভিত্তিহীন। কারণ আল্লাহ, যিনি বহুবিবাহ বৈধ করেছেন, তিনিই তাঁর বান্দাদের জন্য রিজিকের গ্যারান্টি দিয়েছেন এবং পৃথিবীতে তাদের জন্য যথেষ্ট সম্পদ সৃষ্টি করেছেন। যে ঘাটতি দেখা দেয়, তা মূলত শাসক, সরকার ও ব্যক্তিদের অন্যায় এবং অপব্যবস্থাপনার ফল। উদাহরণ হিসেবে চীনের দিকে তাকান—জনসংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ, তবুও আজ তারা বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। অন্য দেশগুলো দু’বার চিন্তা করে, চীনের সঙ্গে বিরোধে জড়ানো উচিত কি না। একই সঙ্গে তারা একটি বড় শিল্পোন্নত জাতিও বটে। আমি ভাবি, কে-ই বা চীনকে আক্রমণ করার সাহস করবে? আর কেনই বা করবে?”

নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি
পরিসংখ্যান বলছে—নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি। যদি প্রত্যেক পুরুষ কেবল একজন নারীকে বিয়ে করে, তাহলে বহু নারী অবিবাহিতা থেকে যাবে। এটি তার ব্যক্তিগত জীবন ও গোটা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। স্বামীহীন সেই নারী কখনোই এমন একজন অভিভাবক পাবে না, যে তার দায়িত্ব নেবে, তার ভরণপোষণ করবে, তাকে পাপ থেকে রক্ষা করবে এবং তাকে সন্তানসুখ দেবে। এর ফলে অনেক নারী বিপথগামী হয়ে পড়তে পারে—তবে যাদের প্রতি আল্লাহ্‌র বিশেষ দয়া থাকবে তারা ব্যতিক্রম। এ অবস্থায় সমাজও ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কারণ অবিবাহিতা নারী যদি পবিত্র জীবনযাপন করতে ব্যর্থ হয়, তবে সে পতিত হয় ব্যভিচার ও পতিতাবৃত্তির গভীর কূপে—আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। এর মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়তে পারে, এছাড়াও অনিরাময়যোগ্য মহামারির জন্ম হয়—যেমন এইডস ও অন্যান্য ভয়াবহ সংক্রামক রোগ। এর পাশাপাশি পরিবার ভেঙে পড়া, জন্ম নেওয়া পরিচয়হীন সন্তান, যারা জানে না তাদের পিতা কে। এমন সন্তানরা সমাজে বেড়ে উঠে করুণা ও সঠিক দিকনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হয়ে। যখন তারা সত্যটা জানতে পারে যে তারা অবৈধ সন্তান, তখন তা তাদের আচরণে প্রতিফলিত হয়। তারা বিদ্রোহী হয়ে উঠতে পারে, সমাজের বিরুদ্ধে ঘৃণা পোষণ করতে পারে, এমনকি হয়ে উঠতে পারে অপরাধী গ্যাংয়ের নেতা। ইতিহাস সাক্ষী—এমন দৃষ্টান্ত বহু দেশে বিদ্যমান।

আরও কিছু বাস্তব কারণ

পুরুষরা সাধারণত বিপজ্জনক কাজে নিয়োজিত থাকে, যেখানে মৃত্যুঝুঁকি বেশি। বিশেষত যুদ্ধক্ষেত্রে তারা সৈনিক হয়ে প্রাণ দেয়। ফলে পুরুষের মৃত্যু নারীর তুলনায় বেশি হয়, আর স্বামীহীন নারীর সংখ্যা বেড়ে যায়। কাজেই এর একমাত্র সমাধান হলো বহুবিবাহ।
অনেক পুরুষের যৌন চাহিদা প্রবল থাকে, যেখানে একজন স্ত্রী যথেষ্ট হয় না। যদি তাকে বলা হয়, “তুমি আরেকজনকে বিয়ে করতে পারবে না”, তবে সে ভীষণ কষ্ট পাবে এবং অবৈধ পথে তার কামনা মেটানোর চেষ্টা করবে।
তাছাড়াও, একজন নারী প্রতি মাসে মাসিক অবস্থায় থাকে এবং সন্তান জন্মের পর প্রায় চল্লিশ দিন নিফাসে থাকে। এ সময়ে স্বামী স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে পারে না, আর চিকিৎসাবিজ্ঞানেও প্রমাণিত হয়েছে—এ সময়ে সহবাস ক্ষতিকর। তাই ন্যায়সঙ্গত আচরণের শর্তে বহুবিবাহ বৈধ।

ইতিহাসে বহুবিবাহ
বহুবিবাহ শুধু ইসলামে নয়, পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের যুগেও প্রচলিত ছিল। আল্লাহর নবী সুলাইমান (আঃ)-এর নব্বইজন স্ত্রী ছিল (বাইবেলে উল্লেখ আছে দেড় হাজার)। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন যাদের আট বা পাঁচজন স্ত্রী ছিলো। নবীজি তাদের চারজন রেখে বাকিদের তালাক দিয়ে দিতে বলেছিলেন। অধিকন্তু, একজন স্ত্রী বন্ধ্যা হতে পারেন, অসুস্থ হতে পারেন, কিংবা স্বামীর চাহিদা পূরণে অক্ষম হতে পারেন। স্বামী সন্তান কামনা করতে পারেন, যা বৈধ আকাঙ্ক্ষা। এর একমাত্র সমাধান আরেকজন স্ত্রী গ্রহণ।

কখনো একজন নারী হতে পারেন স্বামীর নিকটাত্মীয়া, অবিবাহিতা বা বিধবা। এমন অবস্থায় পুরুষটি মনে করতে পারেন, তার দায়িত্ব হবে ওই নারীকে নিজের পরিবারে অন্তর্ভুক্ত করা—প্রথম স্ত্রীর পাশাপাশি তাকে বিয়ে করা—যাতে তার পবিত্রতা রক্ষা হয় এবং তার ভরণপোষণ নিশ্চিত হয়। এটি তাকে একা ফেলে রাখা বা তার জন্য জন্য শুধু খরচ চালানোর চেয়ে উত্তম।
আরও কিছু শর‘ঈ স্বার্থ রয়েছে যা বহুবিবাহকে প্রয়োজনীয় করে তোলে, যেমন—পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করা, অথবা একজন নেতা ও তার কিছু অনুগত ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্ক মজবুত করা। এমন পরিস্থিতিতে তিনি ভাবতে পারেন যে, এই লক্ষ্য অর্জনের একটি উপায় হলো বিবাহের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা, এমনকি তা যদি বহুবিবাহের মাধ্যমেও হয়।
বহুবিবাহে আপত্তি ও তার জবাব

১. আপত্তি: কিছু মানুষ বলবেন যে, বহুবিবাহ মানে একই ঘরে একাধিক স্ত্রী থাকা। এতে স্ত্রীদের মধ্যে বিরোধ ও শত্রুতা সৃষ্টি হতে পারে, যা স্বামী, সন্তান ও অন্যদের উপর প্রভাব ফেলবে। এটি ক্ষতিকর এবং এ ধরনের পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা উচিত। তাদের মতে, একমাত্র সমাধান হলো বহুবিবাহকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা।

উত্তর: এই আপত্তির জবাব হলো—পারিবারিক কলহ এমনিতেও হতে পারে, যখন একজন স্ত্রী থাকে, আর একাধিক স্ত্রী থাকলেও কলহ নাও হতে পারে, যেমনটা বাস্তবে দেখা যায়। ধরি, এক স্ত্রীর সাথে বিবাহের তুলনায় বহুবিবাহে কলহের সম্ভাবনা বেশি, আর তা ক্ষতিকরও হতে পারে। তবুও, বহুবিবাহের বহু কল্যাণ এই ক্ষতির চেয়ে অনেক বেশি। জীবন কখনো পুরোপুরি খারাপ বা পুরোপুরি ভালো নয়; প্রত্যেকের আশা থাকে যে, ভালো দিক খারাপ দিকের চেয়ে বেশি হবে। এই নীতি বহুবিবাহ বৈধ করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

তাছাড়া, ইসলামের বিধান অনুযায়ী প্রত্যেক স্ত্রীর আলাদা, স্বতন্ত্র বাসস্থানের অধিকার আছে। স্বামীর জন্য বৈধ নয় যে, সে স্ত্রীদের একই ঘরে থাকতে বাধ্য বা জোর করবে।

২. আপত্তি: যদি পুরুষদের একাধিক স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়, তবে কেন নারীদের একাধিক স্বামী গ্রহণ করার অধিকার নেই?

উত্তর: নারীর একাধিক স্বামী গ্রহণের কোনো অর্থ নেই। বরং এটি তার মর্যাদার পরিপন্থী। কারণ, সন্তান জন্ম দেওয়ার দায়িত্ব নারী বহন করে, এবং এই পরিস্থিতিতে সে তার সন্তানের বংশপরিচয় নির্ধারণ করতে পারবে না। যদি একাধিক পুরুষের শুক্রাণু থেকে সন্তান জন্মায়, তবে সন্তানের বংশপরিচয় হারিয়ে যাবে এবং কেউ জানবে না যে, কে সন্তানের লালন-পালনের দায়িত্বে থাকবে। এটি পরিবার ভাঙনের দিকে নিয়ে যাবে, পিতা-পুত্র সম্পর্ক নষ্ট হবে, যা ইসলামে অনুমোদিত নয়। এটি নারীর, সন্তানের এবং সমাজের সর্বোপরি কল্যাণের পরিপন্থী।

তথ্যসূত্র: আল-মুফাসসাল ফি আহকাম আল-মারাহ, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৯০। মহান আল্লাহ ভালো জানেন। 

Translated Into Bangla (From IslamQA Website)....