Are you sure?

ইতিহাস »  বিবিধ ইতিহাস

কুরআন কে লিখেছে এবং এটি কীভাবে সংকলিত হয়েছে?

আল্লাহ কুরআন সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন
আল্লাহ নিজেই কুরআনকে সংরক্ষণ করার গ্যারান্টি দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “নিশ্চয়ই আমরাই জিকির (অর্থাৎ কুরআন) নাযিল করেছি এবং নিশ্চয়ই আমরাই তা রক্ষা করবো।” [সূরা আল-হিজর ১৫:৯]

ইমাম ইবনে জারীর আত-তাবারী তাঁর তাফসীরে (১৪/৮) বলেছেন:“আল্লাহ বলছেন, আমরাই জিকির (স্মরণীয় বার্তা অর্থাৎ কুরআন) নাযিল করেছি, এবং আমরাই কুরআনকে রক্ষা করবো—যাতে এর মধ্যে কোনো মিথ্যা বিষয় যোগ না হয় যা এর কোন অংশ নয়, কিংবা এর কোনো অংশ বাদ না যায়। সেটা হোক বিধান, শাস্তি বা উত্তরাধিকার সংক্রান্ত কোনো বিষয়।”

ইমাম আস-সা’দী তাঁর তাফসীরে (পৃ. ৬৯৬) বলেছেন: “আমরাই কুরআন নাযিল করেছি, যাতে প্রত্যেক বিষয়ের উল্লেখ আছে এবং স্পষ্ট প্রমাণ আছে, আর এর মাধ্যমে আমরা তাদের স্মরণ করাই যারা স্মরণ করতে চায়।এবং নিশ্চয়ই আমরা তা রক্ষা করবো’—এর মানে হলো, অবতীর্ণ হওয়ার সময় এবং অবতীর্ণ হওয়ার পরেও। অবতীর্ণ হওয়ার সময় আমরা এটিকে প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তানের হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করেছি, আর অবতীর্ণ হওয়ার পর মহান আল্লাহ তাআলা তা তাঁর রাসূলের অন্তরে স্থাপন করে দিয়েছেন। আল্লাহ এর শব্দসমূহকে রক্ষা করেছেন যাতে তা কখনো পরিবর্তিত না হয়, কোনো কিছুর যোগ বা বিয়োগ না হয়, কিংবা এর অর্থ বিকৃত না হয়। কেউ যদি এর অর্থ বিকৃত করতে চেষ্টা করে, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই এমন কাউকে পথ দেখাবেন যে কুরআনের সত্য ব্যাখ্যা তুলে ধরবে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্যতম নিদর্শন এবং তাঁর মুমিন বান্দাদের জন্য একটি বিশাল নিয়ামত। এই সুরক্ষার আরেক দিক হলো, আল্লাহ কুরআনের অনুসারীদের তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে রক্ষা করেন— এমনকি কোনো শত্রুই তাদেরকে পরাস্ত করতে বা ধ্বংস করতে সক্ষম নয়।”

ধাপে ধাপে কুরআন অবতীর্ণ হওয়া
পবিত্র কুরআন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপর দীর্ঘ ২৩ বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে নাযিল হয়েছে। আল্লাহ বলেন (অর্থের ব্যাখ্যা): “এবং এটি এমন এক কুরআন, যেটিকে আমরা বিভক্ত করেছি, যাতে আপনি মানুষের কাছে তা ধীরে ধীরে পাঠ করতে পারেন; আর আমরা তা ধাপে ধাপে নাযিল করেছি।” [সূরা আল-ইসরা ১৭:১০৬]

ইমাম আস-সা’দী (রহ.) ব্যাখ্যায় বলেছেন: “এর মানে হলো, আমরা এই কুরআন ধাপে ধাপে নাযিল করেছি, যাতে হিদায়াত ও ভ্রান্তির মধ্যে এবং একই সাথে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করা যায়। এছাড়াও ‘যাতে আপনি তা মানুষের নিকট ধীরে ধীরে তা পাঠ করতে পারেন’—অর্থাৎ আস্তে আস্তে, যাতে তারা এর অর্থ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে, এবং এর মধ্যে থাকা জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা বুঝতে পারে। ‘আর আমরা তা ধাপে ধাপে নাযিল করেছি’—অর্থাৎ ধীরে ধীরে, ২৩ বছরের মধ্যে।” (তাফসীর আস-সা’দী, পৃ. ৭৬০)।

আরবদের মধ্যে তখন খুব বেশী মানুষ পড়তে জানতো না 
আরবদের মধ্যে সাক্ষরতা (পড়াশোনার জ্ঞান) খুব বেশি ছড়িয়ে ছিল না। আল্লাহ তাদের এভাবে বর্ণনা করেছেন, যখন তিনি বলেন (অর্থের ব্যাখ্যা): “তিনিই উম্মিদের মধ্যে তাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন (মুহাম্মাদকে)।” [সূরা আল-জুমু‘আ ৬৩:২]

তারা কুরআন মুখস্থ করতো, আর তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন কুরআনের কিছু আয়াত বা সূরা পশুর চামড়া, সাদা মসৃণ পাথর ইত্যাদির ওপর লিখে রাখতো।

কুরআন ছাড়া অন্য কিছু লেখার নিষেধাজ্ঞা
প্রথমে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআন ছাড়া অন্য কিছু লিখতে নিষেধ করেছিলেন। তিনি কিছু সময়ের জন্য তাঁর হাদিস লিখতেও নিষেধ করেছিলেন, যাতে সাহাবাগণ পুরো মনোযোগ দেন কুরআন মুখস্থ করা এবং তা লিপিবদ্ধ করার দিকে। এছাড়াও যেন কোন ভাবেই নবীজির বাণী (হাদিস) আল্লাহর বাণীর সঙ্গে মিশে না যায়। এর মাধ্যমে কুরআনকে সুরক্ষিত রাখা হয়েছিল, যাতে তাতে কিছু যোগ বা বিয়োগ না হয়।

ওহি লিপিবদ্ধ করার নববী নির্দেশ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কিছু বিশ্বস্ত ও জ্ঞানী সাহাবীকে ওহি লিখে রাখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাদের জীবনীতে তারা “কাতীবে ওহী বা ওহী লেখক” হিসেবে পরিচিত ছিল। এদের মধ্যে ছিলেন চার খলিফা, আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আল-আস, মু‘আবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান, যায়েদ ইবনে সাবিত (রাযি.) এবং অন্যরা—আল্লাহ তাদের সবার প্রতি সন্তুষ্ট হোন।

পবিত্র কুরআন সাতটি উপভাষায় নাযিল হয়েছিল
তাছাড়াও, কুরআন সাতটি উপভাষায় নাযিল হয়েছিল। এ বিষয়ে সহী হাদিসে উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযি.) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। এটি বুখারি (২২৮৭) ও মুসলিম (৮১৮) বর্ণনা করেছেন। এগুলো ছিল আরবদের উপভাষা, যেগুলো বাগ্মিতা ও স্পষ্টভাষীতার জন্য সুপরিচিত ছিল।

কুরআন কীভাবে সংকলন করা হয়েছিল
পবিত্র কুরআন খলিফা আবু বকর আস-সিদ্দীক (রাযি.)-এর যুগ আসার আগ পর্যন্ত সাহাবায়ে কিরামের হৃদয়ে মুখস্থ ছিল এবং পশুর চামড়া ও অন্যান্য উপকরণে লিপিবদ্ধ করা ছিল কেবল। রিদ্দাহ যুদ্ধের সময় অনেক সাহাবি, যারা কুরআন হিফজ করেছিলেন, তারা শহীদ হয়ে যান। তখন আবু বকর (রাযি.) আশঙ্কা করলেন যে কুরআন হারিয়ে যেতে পারে। তাই তিনি জ্যেষ্ঠ সাহাবিদের সঙ্গে কুরআনকে একটি গ্রন্থ আকারে সংকলন করার ব্যাপারে পরামর্শ করেন, যেন এটি সংরক্ষিত থাকে এবং কখনো হারিয়ে না যায়। তিনি এ দায়িত্ব অর্পণ করেন কুরআনের প্রধান হাফিজ যায়েদ ইবনে সাবিত (রাযি.)-কে।

ইমাম বুখারি তাঁর সহিহ হাদিসে (৪৯৮৬) বর্ণনা করেছেন যে, যায়েদ ইবনে সাবিত (রাযি.) বলেছেন: ইয়ামামার যুদ্ধে যখন অনেক সাহাবি শহীদ হয়েছিলেন, তখন আবু বকর আস-সিদ্দীক আমাকে ডেকে পাঠালেন।  [অর্থাৎ নবী (সা.)-এর বহু সাহাবি যারা কুরআন হিফজ করেছিলেন, তারা ভন্ড নবী মুসাইলামার বিরুদ্ধে যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন]। আমি তাঁর কাছে গেলাম এবং দেখলাম উমর ইবনে খাত্তাব (রাযি.) তাঁর সঙ্গে বসে আছেন। আবু বকর আমাকে বললেন, “উমর আমাকে জানিয়েছে: ইয়ামামার যুদ্ধে কুরআনের হাফিজদের (কুররা-যাদের সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ) মধ্যে অনেকেই শহীদ হয়েছেন। আমি আশঙ্কা করছি যে অন্য যুদ্ধে আরও বেশি হাফিজ শহীদ হতে পারেন, ফলে কুরআনের একটি বড় অংশ হারিয়ে যেতে পারে। তাই আমি প্রস্তাব করছি যে আপনি কুরআন সংগ্রহের নির্দেশ দিন।” তখন আমি উমরকে বললাম, “আপনি কীভাবে এমন কিছু করবেন, যা রাসূলুল্লাহ (সা.) করেননি?” উমর বললেন, “আল্লাহর শপথ! এটি ভালো কাজ।” উমর বারবার আমাকে এ প্রস্তাবে রাজি করানোর চেষ্টা করলেন, অবশেষে আল্লাহ আমার অন্তর উন্মুক্ত করলেন এবং আমি বুঝতে পারলাম যে এটি সত্যিই ভালো কাজ। তারপর আবু বকর আমাকে বললেন, “তুমি একজন বুদ্ধিমান যুবক, আমরা তোমার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ করি না। তুমি রাসূলুল্লাহর (সা.) জন্য ওহি লিখে রাখতে। তাই তুমি কুরআনের বিভিন্ন অংশ খুঁজে বের করো এবং একত্র করে একটি গ্রন্থ আকারে সংকলন করো।” আল্লাহর কসম! যদি আমাকে পাহাড় সরানোর নির্দেশ দেওয়া হতো, তবে সেটি আমার কাছে কুরআন সংকলনের দায়িত্ব নেওয়ার চেয়ে সহজ হতো। আমি আবু বকরকে বললাম, “আপনি কীভাবে এমন কিছু করবেন, যা রাসূলুল্লাহ (সা.) করেননি?” আবু বকর উত্তর দিলেন, “আল্লাহর কসম! এটি ভালো কাজ।” তিনি বারবার আমাকে অনুরোধ করতে থাকলেন, অবশেষে আল্লাহ আমার অন্তর উন্মুক্ত করলেন, যেমনটা আবু বকর ও উমরের অন্তর উন্মুক্ত করেছিলেন। অতঃপর আমি কুরআন খুঁজতে শুরু করলাম এবং তা সংগ্রহ করলাম খেজুরের ডালপালা, সাদা মসৃণ পাথর থেকে এবং তাদের কাছ থেকে যারা তা মুখস্থ জানতেন। অবশেষে আমি সূরা আত-তাওবার শেষ আয়াত আবু খুজাইমাহ আল-আনসারির কাছে পেলাম, আর কারো কাছে তা পাইনি। সেই আয়াত হলো (অর্থের ব্যাখ্যা): “নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের কাছে একজন রাসূল আগমন করেছেন। তোমাদের কষ্ট তাকে কষ্ট দেয়, তোমাদের দুঃখে তিনি ব্যথিত হন.....” [সূরা আত-তাওবা ৯:১২৮] সূরা বারাআহ (অর্থাৎ আত-তাওবা)-এর শেষ আয়াত পর্যন্ত।এরপর কুরআনের পূর্ণ পাণ্ডুলিপি আবু বকরের (রাযি.) কাছে সংরক্ষিত থাকলো, তাঁর মৃত্যুর পর উমরের (রাযি.) কাছে ছিল, এবং তাঁর মৃত্যুর পর উমরের কন্যা হাফসাহ (রাযি.)-এর কাছে সংরক্ষিত ছিল। উল্লেখ্য, সাহাবী জায়েদ ইবনে সাবিত (রাযি.) সম্পূর্ণ কুরআন খুব ভালো মুখস্থ জানতেন, কিন্তু এরপরেও তিনি সংকলনের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক ছিলেন। তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো আয়াত লিখতেন না, যতক্ষণ না তা সম্পর্কে দুইজন সাহাবি সাক্ষ্য দিতেন যে তারা এটি সরাসরি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে শুনেছেন।

উসমানী মুসহাফ কী ছিল?

এই মুসহাফ (কুরআনের লিখিত সংকলন) খলিফা উসমান ইবনে আফফান (রাযি.)-এর যুগ আসার আগ পর্যন্ত আগের খলিফাদের হাতে ছিল । সাহাবারা (রাযি.) বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিলেন এবং তাঁরা সবাই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে শোনা সাত ক্বিরাআতের ভিত্তিতে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। তাঁদের প্রত্যেকের ছাত্ররা তাদের শায়খের কাছ থেকে শোনা কিরাআতেই কুরআন তিলাওয়াত করতো। কোনো ছাত্র যদি অন্য কারো তিলাওয়াত নিজের জানা পদ্ধতির থেকে ভিন্ন শুনতো, তবে সে ছাত্র তার ভুল হয়েছে মনে করে অভিযোগ করতো। এভাবে চলতে থাকায় সাহাবারা আশঙ্কা করলেন যে, এ বিষয়টি তাবেয়ীন ও পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ফিতনা (বিবাদ ও বিভেদ) সৃষ্টি করবে। তখন তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন যে, মানুষকে এক ক্বিরাআতের উপর ঐক্যবদ্ধ করা উচিত—সেটি হলো কুরাইশ গোত্রের উপভাষা, যেই উপভাষায় কুরআন প্রথম নাযিল হয়েছিল—এর ফলে যেন কোন প্রকার বিরোধ না থাকে এবং সমস্যারও সমাধান হয়। উসমান (রাযি.)-এর কাছে এ ব্যাপারে পরামর্শ করা হলে তিনি সম্মতি প্রদান করেন।

সহিহ বুখারিতে (৪৯৮৮) আনাস ইবনে মালিক (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে: হুযাইফা ইবনে ইয়ামান (রাযি.) উসমান (রাযি.)-এর কাছে আগমণ করলেন, তখন শাম ও ইরাকের অধিবাসীরা আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান জয় করতে যুদ্ধ করছিলো। হুযাইফা (রাযি.) তাদের কুরআন তিলাওয়াতের পার্থক্যে আতঙ্কিত হয়ে উসমানকে বললেন, “হে আমীরুল মু’মিনীন! এই উম্মাহকে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের মতো কিতাব নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে রক্ষা করুন।” তখন উসমান (রাযি.) হাফসাহ (রাযি.)-কে বার্তা পাঠালেন: “আমাদের কাছে কুরআনের সেই পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে দিন, যাতে আমরা এর থেকে অনুলিপি তৈরি করতে পারি, তারপর আমরা মূল কপিটি আপনাকে ফিরিয়ে দেব।” হাফসাহ (রাযি.) তা পাঠিয়ে দিলেন। এরপর উসমান (রাযি.) আদেশ দিলেন যায়েদ ইবনে সাবিত, আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর, সাঈদ ইবনে আস এবং আবদুর রহমান ইবনে হারিস ইবনে হিশাম (রাযি.)-কে যেন তাঁরা কুরআনের অনুলিপি তৈরি করেন। উসমান (রাযি.) তাঁদের তিনজনকে, যারা কুরায়শ গোত্রভুক্ত ছিলেন, বললেন: “যদি তোমরা কুরআনের কোনো বিষয়ে যায়েদ ইবনে সাবিতের সঙ্গে মতভেদ কর, তবে কুরাইশ গোত্রের উপভাষা অনুযায়ী লিখবে, কেননা কুরআন তাঁদের ভাষাতেই নাযিল হয়েছে।” অতঃপর, তাঁরা তাই করলেন, এবং বহু কপি তৈরি করা হলে উসমান (রাযি.) মূল পাণ্ডুলিপি হাফসাহ (রাযি.)-কে ফিরিয়ে দিলেন। উসমান (রাযি.) তখন প্রতিটি মুসলিম প্রদেশে একটি করে কপি পাঠালেন এবং নির্দেশ দিলেন—যে সব খণ্ডিত পাণ্ডুলিপি বা সম্পূর্ণ কপি আছে, সেগুলো পুড়িয়ে ফেলা হোক।

ইমাম ইবনে শিহাব বর্ণনা করেছেন: খারিজাহ ইবনে যায়েদ ইবনে সাবিত তাঁকে বলেছেন যে, তিনি তাঁর পিতা যায়েদ ইবনে সাবিতকে বলতে শুনেছেন: “যখন আমরা মুসহাফ লিখছিলাম, আমি সূরা আহযাবের একটি আয়াত লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম, যেটি আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে তিলাওয়াত করতে শুনতাম। আমরা খুঁজতে দেখলাম এবং অবশেষে তা খুজাইমাহ ইবনে সাবিত আল-আনসারির কাছে পেলাম। (আয়াতটি হলো): ‘মুমিনদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে যারা আল্লাহর সঙ্গে করা অঙ্গীকারে সত্যনিষ্ঠ রয়েছে।’ [সূরা আল-আহযাব ৩৩:২৩] — তারপর আমরা আয়াত-টি তার স্থানে সূরার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করলাম।” এরপর বিভেদের অবসান ঘটলো এবং মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ হলো। কুরআন তখন থেকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মুখে মুখে এবং অন্তরে অন্তরে সংরক্ষিত হয়ে আসছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। এভাবেই আল্লাহ তাঁর কিতাবকে সংরক্ষিত রেখেছেন। নিশ্চয় এটি সেই আয়াতের সত্যতা প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে তিনি (আল্লাহ) বলেনঃ

“নিশ্চয়ই আমরাই জিকির (অর্থাৎ কুরআন) নাযিল করেছি এবং নিশ্চয়ই আমরা তা সংরক্ষণ করবো।” [সূরা আল-হিজর ১৫:৯]

Translated Into Bangla (From IslamQA Website)....